Skip to content Skip to footer

সাপ উপাসনা: ভিন্ন এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য

বেহুলা আর লখিন্দরের কাহিনী সম্পর্কে জানে না- এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া কঠিন। শিবভক্ত চাঁদ সওদাগরের জেদ, দেবী মনসার ক্রোধ, লখিন্দরের মৃত্যু, বেহুলার অসম্ভবকে সম্ভব করার কাহিনীর উৎস পদ্মপুরাণ। মধ্যযুগের বাঙালি সাহিত্যিকদের বড় একটা অংশই এ নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন। মঙ্গলকাব্যের এই অংশ পরিচিত হতো মনসামঙ্গল নামে। এই মনসা মূলত সর্পদেবী। আর এই আখ্যান ভারতীয় সংস্কৃতিতে সর্প উপাসনার ঐতিহ্য প্রমাণ করে। আদতে শুধু ভারতে না; পৃথিবীর বিভিন্ন সংস্কৃতিতেই সাপ উপাস্য হিসেবে বিদ্যমান।

সাপের শরীর এবং খোলস বদলের ঘটনা প্রায়ই সাপকে অমর প্রাণী হিসেবে মানবসমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছে। হয়ে উঠেছে পুনর্জন্মের প্রতীক। পৃথিবীর প্রাচীনতম মহাকাব্য গিলগামেশে দেখা যায় কীভাবে সঞ্জীবনী লতা নিয়ে সাপ চলে যায়। প্রায়শ সাপকে দৈব আশির্বাদে অমরত্ব প্রাপ্ত গণ্য করা হয়েছে। তাছাড়া সাপের গায়ের মোহনীয় সজ্জার ও কোমলতার পাশাপাশি হিংস্রতা ও ক্রুদ্ধ রূপ মানুষের মনে বিশেষ অবস্থান তৈরি করেছে। সাপকে কখনও সংযুক্ত করা হয়েছে মৃত্যু এবং দুর্ঘটনার সাথে, কখনও কোনো রত্নভাণ্ডারের পাহারাদার, কখনো আবার সাপ এসেছে পৃথিবীর সৃষ্টিপর্বেই।

প্রাচীন মিশর

মিশরীয় পুরাণে সাপের তাৎপর্য বহুবিধ। নানা উপাস্যের রূপে মিশরীয় ধর্মের সাথে একীভূত হয়েছে। প্রাচীন বিশ্বাসে জন্মদান ও শিশুপালনের অভিভাবক দেবী ওয়াজেত। পরবর্তীতে অবশ্য তাকে ফারাওদের রক্ষকদেবী হিসেবেও চিত্রিত করা হয়। যেকোনো মুহূর্তে ছোবল দিতে প্রস্তুত, এমন ভঙ্গিতে ফনা তুলে থাকা কোবরার চিত্র। এই দেবী সম্পর্কিত ছিল সূর্যদেবতা রা-র সাথে। অন্যদিকে, নেহেবকাও সবচেয়ে পুরনো দেবতাদের একজন। অমরত্বের প্রতীক তিনি। পাতাল দরজার প্রহরি এবং মা’ত সভার একজন বিশেষ সদস্য। পুরাণ অনুসারে, মৃতের আত্মার বিচারের জন্য পাতালদেবতা ওসিরিসের সাথে ৪২ জনের একটা দল থাকে; সেটাই মা’ত সভা।

বিশৃঙ্খলার আদিতম দেবতা আপেপ; Image source: landioustravel.com

মৃত্যু আর বিশৃঙ্খলার দেবতা আপেপ। সৃষ্টির শুরুতে সমস্ত কিছুই বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত ছিল। সেই অর্থে বলতে গেলে তিনিই আদি দেবতা। তাকে বিবৃত করা হয় অতিকায় হিংস্র সাপদেবতা হিসেবেই। সৃষ্টির শুরুতে রা এই আপেপকেই যুদ্ধে পরাজিত করে প্রতিষ্ঠা করেন শৃঙ্খলা।

গ্রিক পুরাণ

প্লেটোর দেয়া ভাষ্য অনুসারে, মৃত্যুশয্যায় সক্রেটিস বলেন,

ক্রিটো, এসক্লিপিয়াস একটা মোরগ পায় আমাদের কাছে। দিয়ে দিও, ভুলে যেও না আবার।

এই এসক্লিপিয়াস মূলত প্রাচীন গ্রিসের চিকিৎসার দেবতা। গোটা গ্রিস জুড়েই ছিল তার খ্যাতি। তাকে গণ্য করা হতো দেবতা অ্যাপোলোর সন্তান হিসেবে। সেই অর্থে তিনিও দেবতা। প্রাচীন গ্রিসে সাপ অমরত্বের প্রতীক। এসক্লিপিয়াসের হাতেও তাই আরোগ্যকারী একটা দণ্ড, যাকে পেঁচিয়ে রয়েছে একটা সাপ। যদিও বর্তমান চিকিৎসাশাস্ত্রে বহুল ব্যবহৃত প্রতীক দেবতা হারমেসের দুই সাপওয়ালা দণ্ড ক্যাডিওসিয়াস।

সাপের ক্ষমতা এবং ভয়ানক চিত্র অঙ্কিত হয়েছে গরগন হিসেবে। স্থিনু, ইউরাইলি এবং মেডুসা নামে তিন বোন তারা। তাদের তামার হাত আর স্বর্ণের পাখা। তাদের মুখের দিকে তাকালে যে কেউ পাথরে পরিণত হবে। কিন্তু সবচেয়ে ভয়ানক তাদের মাথায় চুলের জায়গায় অজস্র জীবন্ত আর বিষাক্ত সাপ। সাপ নিয়ে তৃতীয় বিখ্যাত বিবরণ খুব সম্ভবত হাইড্রা। দানবীয় এই সামুদ্রিক সাপ শুধু অমর না; তার একটা মাথা কেটে ফেলা হলে সেই ক্ষত থেকে দুটো মাথা গজিয়ে উঠতো নতুন করে।

একটা মাথা কেটে ফেলা হলে সেই ক্ষত থেকে দুটো নতুন মাথা বের হয়; Image Source: wallhere.com

অস্ট্রেলিয়ার উপকথা

আদি অস্ট্রেলীয় বিশ্বাসে সৃষ্টির প্রাথমিক দেবতাই সাপ। স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতির ভিন্নতার কারণে তার নামও ভিন্ন। তবে সমস্ত আদিবাসী সংস্কৃতিতেই বিদ্যমান এই সাপদেবতা। জীবনদাতা হিসেবে তিনি একদিকে পানির সাথে সম্পৃক্ত। তিনি একদিকে মানুষের রক্ষাকর্তা, এবং একইসাথে দুষ্টের জন্য শাস্তিপ্রদানকারী। আকাশে রঙধনু ওঠার মানে তিনি এক জলাশয় থেকে অন্য জলাশয়ে যাচ্ছেন। অজস্র নাম থাকার কারণে নৃবিজ্ঞানীরা তাকে সহজে পরিচয় করিয়ে দেন ‘দ্য রেইনবো স্নেইক’ নামে।

কোনো জাতিগোষ্ঠীর বিশ্বাসে তিনি পুরুষ হলেও কিছু সমাজে তিনি নারী রূপে উল্লেখিত। তখন মহান মাতা হিসেবে পূর্বপুরুষদের জন্ম দিয়েছেন। মানুষকে শিখিয়েছেন কীভাবে ধর্মপালন করতে হয়। কোনো বর্ণনায় তিনি বৃষ্টি ও বন্যা আনয়নকারী, আবার ঋতু পরিবর্তনকারী। তবে সমস্ত ক্ষেত্রেই তার অবস্থান শক্ত।

নর্স পুরাণ

ইয়োরমুঙ্গানদর হলো মিদগার্দ বা মানুষের পৃথিবীতে ঘিরে রাখা এক সাপের নাম। আরো স্পষ্টভাবে বললে, লোকি এবং তার দানবী স্ত্রী আঙ্গরবদার তিন দানবসন্তানের একজন ইয়োরমুঙ্গানদর। বাকি দুজন নেকড়ে ফেনরির এবং পাতালের হেল। ইয়োরমুঙ্গানদরের জন্মের পর ওদিন তাকে মিদগার্দকে ঘিরে থাকা সমুদ্রে নিক্ষেপ করলেন। দানবটা সেখানেই বড় হতে হতে পৃথিবীকে পেঁচিয়ে ফেলে। বৃত্তাকারে নিজের লেজকে মুখে পুরে রাখে। বেনজিন চক্র কিংবা ইউরোবরাসের কথা মনে করা যেতে পারে।

র‌্যাগনারকের সময় মুখোমুখি হবে থর এবং ইয়োরমুঙ্গানদর; Image Source: bavipower.com

বজ্রদেবতা থর ঘৃণা করে তাকে। বেশ কয়েকবার মুখোমুখিও হয়েছে দুজন। ইয়োরমুঙ্গানদর ফের ফিরে গেছে সমুদ্রে। যেদিন সে নিজের লেজকে মুখ থেকে বের করে ভূমিতে উঠে আসবে, সেই মুহূর্ত থেকেই র‌্যাগনারকের শুরু। সেদিন তার সাথে যোগ দেবে ভাই ফেনরির। ফেনরির পৃথিবীতে আগুন জ্বালাবে, আর ইয়োরমুঙ্গানদর বাতাসে মিশিয়ে দেবে বিষ। অবশেষে মুখোমুখি হবে থর আর ইয়োরমুঙ্গানদর। তাকে হত্যা করার পরে থর নিজেও তার বিষের দরুন মৃত্যুমুখে পতিত হবেন সেদিন। এটাই নিয়তি।

মেসোপটেমিয়ার বিশ্বাস

সুমেরিয় সভ্যতায় দেবতা নিনগিশজিদাকে চিত্রিত করা হয় কুণ্ডলি পাকানো সাপের আকৃতিতে। অনেকটা কাছের শিকড়ের মতো। তিনি কৃষি আর পাতালের দেবতা। কখনও তার প্রতীক হারমেসের ক্যাডিওসিয়াসের মতোই। একইভাবে বাসমু আরেকটি শিং এবং পাখাওয়ালা দানবাকৃতির সাপ। বাসমু নামের অর্থই বিষাক্ত সাপ। প্রতীকায়িত করে পুনর্জন্ম এবং মৃত্যুকে।

মুহুসসু নামের অর্থ দুর্ধর্ষ সাপ। যদিও তার মধ্যে কয়েকটা ধারণা মিশ্রিত হয়েছে। ব্যাবিলনের ইশতার গেটের খোদাইয়ে তাকে কৃশকায় দেখা যায়। সেই সাথে আছে শিং, লম্বা ঘাড়, এবং কাঁটাযুক্ত জিহবা। শরীর আবৃত নরম আঁশ দিয়ে। মুহুসসুকে ব্যাবিলনের প্রধান দেবতা মারদুকের ঘনিষ্ঠ রূপে গণ্য করা হতো। মনে করা হতো আত্মার অভিভাবক।

ভারতভূমি

হিন্দুধর্ম মোতাবেক নাগ দৈব সত্তা। যখন খুশি সাপে রূপান্তরিত হতে পারে। কল্যাণের উপাস্য হিসেবে পূজিত হলেও তাদের শত্রুতা ভয়াবহ। কোনো গুপ্তধনের প্রহরি হিসেবে তাদের উপস্থিতি বেশ সাধারণ। আদিশীষ হলো নাগরাজ। পাঁচ মাথাবিশিষ্ট এই সাপ পৃথিবী সৃষ্টির আদিতম অবস্থা থেকেই বিরাজমান। যখন সমস্ত কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে মহাপ্রলয়ে, তখনও টিকে থাকবে। এজন্যই তার নাম আদিশীষ। কুণ্ডলি পাকিয়ে সে যেন একটা আসনের আকার ধারণ করেছে, যেখানে বসে আরামরত বিষ্ণু।

আদিশীষকে আসন বানিয়ে আরামরত বিষ্ণু; Image Source: irshadgul.com

ঋষি জরতকারু এবং দেবী মনসার ছেলে আস্তিক। রারেজা জনমেজয়ের পিতা পরীক্ষিত সাপরাজা তক্ষকের কামড়ে মৃত্যুবরণ করেন। ক্রোধে জনমেজয় গোটা সাপ প্রজাতিই উপড়ে ফেলতে আয়োজন করেন যজ্ঞের, যা সর্পসত্র নামে পরিচিত। যখন সমস্ত সাপ যজ্ঞের আগুনে গিয়ে পড়ছে, তখন মনসার পুত্র আস্তিক রাজা জনমেজয়কে যজ্ঞ থামাতে সম্মত করেন। বেঁচে যায় নাগ। সেই দিনটি পরবর্তীতে নাগপঞ্চমী হিসেবে পালিত হয় হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈনধর্মে। অন্যদিকে, শিবের সঙ্গী বাসুকি। শিবের কাছে সে এতটাই প্রিয় হয়ে উঠেছিল যে, শিব তাকে মালার মতো করে গলায় পরে থাকেন। তার মাথায় থাকে নাগমণি, যা তার শ্রেষ্ঠত্বের আরেকটি প্রমাণ। সর্পদেবী মনসার কথা তো শুরুতেই বলা হয়েছে।

কোরিয়া এবং জাপান

কোরিয়ান সংস্কৃতিতে ইয়োপসিন সম্পদ এবং সমৃদ্ধির দেবী। প্রায়শ তাকে চিত্রিত করা হয় সাপের অবয়ব দিয়ে। গৃহদেবী হিসেবে বাড়ির ছাদে তার অবস্থান বিশ্বাস করা হয়। ছাদ ভিন্ন অন্য কোথাও তার থাকার ইঙ্গিত মানেই দুর্ঘটনার পূর্বাভাস। হতে পারে শারীরিক বা মানসিক কোনো দুর্ঘটনা এগিয়ে আসছে। কিংবা প্রভাব-প্রতিপত্তি কমে যাচ্ছে শিগগিরই। ভক্তরা নানা রকম উপাসনার মধ্য দিয়ে শান্ত রাখতে চায় এই অভিভাবককে। সংসার জীবনের অভিভাবক এবং পার্থিব বিষয়াদির তদারককারী পরিচয়ের বাইরেও ইয়োপসিনের আলাদা পরিচয় আছে। কোরিয়ান উপকথার অন্তত সাতজন দেবীর মা তিনি।

জাপানি উপকথায় অমোননুশি একজন সর্পদেবতা হলেও মানুষের আকৃতি নিতে পারেন। তিনি সন্তান জন্মদান ও লালনপালনের দেবতা। অন্যদিকে ওরোচি নামের অর্থই অতিকায় সাপ। তিনি ফসল ও উর্বরতার দেবতা। উভয়েই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল নদী ও কৃষিনির্ভর অঞ্চলগুলোতে।

আফ্রিকান ঐতিহ্য

পশ্চিম আফ্রিকার বেনিন জুড়ে একসময় হিদা এবং দাহৌমি রাজ্য ছিল। গোটা সময় জুড়ে সাপ পরিণত হয়েছিল গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গে। তাদের মধ্যে প্রধান দাঙবি। জ্ঞান এবং সমৃদ্ধির দেবতা দাঙবি। বিশেষ করে গাছ এবং সমুদ্রের সাথে তাকে সম্পর্কিত করা হতো। হিদা রাজ্যের কেন্দ্রে নির্মিত ছিল মন্দির। অজগর হত্যার শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড; যদিও পরবর্তীতে তা জরিমানায় কমিয়ে আনা হয়।

হাইতির ভুডু সংস্কৃতিতে আদি স্রষ্টা লোয়া ডামবালাকে চিত্রিত করা হয় সাপের আকৃতিতে। অতিকায় দীর্ঘ সাদা সাপ। সাপ যেমনটা জলে ও স্থলে বিচরণ করে, লোয়া ডামবালা তেমন জলে ও স্থলে জীবন দান করেন। কখনও কখনও তাকে জ্ঞান ও সৌহার্দ্যের সাথেও সম্পৃক্ত করা হয়। মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকায় উপাসনা করা হয় মামি ওয়াতার। তিনি উর্বরতা ও আরোগ্যের দেবী। কোথাও চুলখোলা নারীর অতিকায় সাপ ধরে রাখা অবস্থায়, আর কোথাও নারীর শারীর নিচের অংশ সাপ হিসেবে তিনি উপস্থাপিত হন।

উর্বরতা ও আরোগ্যের দেবী মামি ওয়াতা; Image Source: behance.net

কেল্টিক কাহিনী

কোররা কেল্টিক বিশ্বাসে জীবন, মৃত্যু এবং উর্বরতার দেবী। কোথাও তাকে ধরণীমাতা হিসেবেই হাজির দেখা যায়। পুনর্জন্ম, এবং জীবনের বিভিন্ন স্তরে সফরও প্রকাশিত হয় তার মাধ্যমে। চিত্রিত হয় দুটো সাপ পরস্পর পেঁচানো অবস্থায়। কোররার উত্থান ও তার স্থিতিকাল নিয়ে বিস্তারিত না জানা গেলেও তার পতনের আখ্যান জানা যায়।

আয়ার‌ল্যান্ড থেকে সমস্ত সাপ সরিয়ে দেয়ার কৃতিত্ব দেয়া হয় সেইন্ট প্যাট্রিকের নামে। তিনি স্থানীয় কেল্টিক ধর্ম এবং ড্রুইড উপাসনার বিরুদ্ধে খড়গহস্ত হয়েছিলেন। বাস্তবিক অর্থেই বিপুল পরিমাণে হ্রাস পেলো সাপের অস্তিত্ব। সাপ উপাসনার সংস্কৃতি প্রতিস্থাপিত হলো খ্রিষ্টধর্মের নানা আচারের মাধ্যমে। কোররার সাথে মোকাবিল হলো সেইন্ট প্যাট্রিকের। কোররা পরিণত হয় পাথরে। এই কিংবদন্তি হয়তো আক্ষরিক অর্থে সত্য না। কিন্তু খ্রিষ্টধর্মের আগমন কীভাবে স্থানীয় সংস্কৃতিতে বিলুপ্ত করেছে; তা স্পষ্ট হয়।

তারপর

অ্যাজটেক উপকথায় প্রধান দেবতা কেতজালকোতল। নামের অর্থ মূল্যবান পালকের সাপ। অ্যাজটেক আমলে (১১০০-১৫২১ খ্রিষ্টাব্দ) তার উপাসনা করা হতো বেশ আড়ম্বরের সাথে। তিনি ছিলেন শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষক। এছাড়া প্রাচীন রোমান উপকথা, চীনা উপকথা, এবং আমেরিকার আদিবাসীদের বিভিন্ন সংস্কৃতিতেও সাপকে বেশ প্রভাবশালী রূপে হাজির হতে দেখা যায়। বাইবেলে আদম ও ইভের গল্প থেকে শুরু করে গসপেলে যীশুর বিবরণী অব্দি সাপকে বিভিন্ন রূপে হাজির হতে দেখা যায়।

সাপ বরাবরই রহস্যময়। মানুষের কল্পনা সাপকে নিয়ে অবচেতনেই মনোযোগ ও আকর্ষণ দেখিয়েছে। সে ভারতে হোক বা মেসো-আমেরিকা; চীনে হোক বা গ্রিসে। কখনও শুভশক্তি ও মানুষকে সুরক্ষাদাতা রূপে; কখনও অপশক্তি ও শত্রুর রূপে। কখনও অমরত্বের প্রতীক ও গুপ্তভাণ্ডারের প্রহরী। আবার কখনও দুর্দশা ও মৃত্যু আনয়নের নায়ক। মানুষ কখনও জন্ম, মৃত্যু, সফলতা আর ব্যর্থতার চক্র থেকে বের হতে পারেনি। ফলে সাপ কেবল প্রাসঙ্গিক হয়েই ওঠেনি, পেয়েছে উপাস্যের মর্যাদা।

Leave a comment

Magazine, Newspapre & Review WordPress Theme

© 2025 Critique. All Rights Reserved.

Sign Up to Our Newsletter

Be the first to know the latest updates